মসজিদে দ্বিতীয় জামাত মাকরূহ হওয়ার কারণ

প্রশ্ন

শায়েখ, যে সমস্ত মানুষেরা হানাফী মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত হয়, উক্ত ব্যক্তিরা যে মসজিদে নামাজ পড়ে থাকেন। সেখানে প্রথমবার জামাত করার পর দ্বিতীয়বার জামাত হয় না বলে ইমাম সাহেবরা মত দিয়ে থাকেন এবং বলেন এটা আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহির ফতোয়া। প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে জামাতে সালাত আদায় করলে সাওয়াবের পরিমাণ বেশি হয় সেখানে দ্বিতীয়বার জামাত করা যাবে না কেন ?

প্রশ্নকারীর নাম: আশরাফুল হক

প্রশ্নকারীর ঠিকানা: West Bengal, Murshidabad

প্রকাশিত: 10-07-2023

উত্তর

ফতওয়া নং ৯৬

 

     যেহেতু একাধিক বার জামা‘আত  করার অনুমতি দিলে পরবর্তী জামাআতের বাহানায় প্রথম জামাআতে হাজির হওয়াকে  মানুষ  গুরুত্ব দিবেনা, ফলে জামাআতে লোক সংখ্যা কম হবে; অথচ  জামাআতের মূল উদ্দেশ্যই হল, বেশি সংখ্যক মানুষ একত্র হয়ে নামায আদায় করা এবং মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা মহব্বত ও হৃদ্যতা সৃষ্টি হওয়া এবং ইসলামের শান প্রকাশ করা। যদি দ্বিতীয় জামাআতের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে মসজিদের জামাআতের উদ্দেশ্য ও গাম্ভীর্য অবশিষ্ট থাকবে না। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যেখানে পুনরায় জামাআতের প্রচলন রয়েছে, সেখানে লোকজন প্রথম জামাআতে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে খুবই অলসতা করে।
এ জন্য হযরত ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মতে মসজিদে ফরয নামাযের জন্য ছানী জামা'আত (অর্থাৎ, মসজিদে একবার জামা'আত হয়ে গেলে আবার দ্বিতীয়বার ঐ মসজিদে ঐ নামাযের জন্য জামা'আত) মাকরূহ তাহরীমী। তবে তিন অবস্থায় ছানী জামা'আত বরং আরও অধিক জামা'আত করা মাকরূহ নয়।

(১) যদি মসজিদ এমন হয় যার ইমাম মুআযযিন নির্দিষ্ট নেই। এরূপ অবস্থায় ছানী জামা'আত করা যায়।

(২) যদি প্রকাশ্যে আযান ইকামত ছাড়া প্রথম জামা'আত হয়ে থাকে ।

(৩) যদি মসজিদের এলাকার নির্দিষ্ট মুসল্লী ও কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্যরা প্রথম জামা'আত করে থাকে।

হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ (রহঃ)-এর মতে এই তিন অবস্থা ছাড়াও সর্বাবস্থায় ছানী জামা'আত করা যায়-মাকরূহ হবে না, যদি প্রথম জামা'আত যে স্থানে হয়েছে সে স্থান পরিবর্তন করে ( ঐ মসজিদেই) অন্য স্থানে ছানী (দ্বিতীয়) জামা'আত করা হয়। অনেকে হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ (রহঃ)-এর মতানুসারে ছানী জামা'আত করে থাকেন, তবে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মত দলীলের দিক দিয়ে অধিক শক্তিশালী হওয়ার কারণে মুহাক্কিক আলেমগণ তাঁর মতানুসারেই ফতওয়া দিয়ে থাকেন।(ফাতাওয়া দারুল উলুম ৩/৪০)

   হযরত আবু বাকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনার আশপাশ থেকে এসে নামায পড়তে চাইলেন। দেখলেন লোকজন নামায পড়ে ফেলেছে। অতঃপর তিনি ঘরে যেয়ে পরিবারের লোকজনকে একত্রিত করে তাদের নিয়ে জামাআতে নামায আদায় করলেন। (আছারুসসুনান ১৩৫,মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৪৫) 
প্রণিধানযোগ্য যে, যদি একই মসজিদে দ্বিতীয় জামাআত  করা জায়েয হত, তাহলে তিনি মসজিদে নববীর ফযীলত ছেড়ে বাড়িতে যেয়ে জামাআত করতেন না। সুতরাং মসজিদে পুনরায় জামাআত করা যে মাকরূহ, এতে তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আমার ইচ্ছা হয় যে, লোকদেরকে জামাআতের সাথে নামায আদায়ের নির্দেশ দেই এবং তাদের জন্য একজন ইমাম নিযুক্ত করি। অতঃপর আমি কাষ্ঠ বহনকারী একটি দল আমার সাথে নিয়ে ঐ লোকদের নিকট যাই যারা জামাআতে শরীক হয়নি। অতঃপর তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিই।

উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রথম জামাআতেই উপস্থিত হওয়া জরুরী। কেননা, যদি পুনরায় জামাআত জায়েযই হতো, তাহলে যারা প্রথম জামাআতে যাবে না, পেছনে থেকে যাবে, তাদের জন্য এই ওযর ছিল যে, আমরা দ্বিতীয় জামাআতে যাওয়ার ইচ্ছা করি। ( দরসে তিরমিজী ১/৪৮৪)

 

           স্বাক্ষরঃ

মুফতী সাইফুল ইসলাম কাসিমী
ফতওয়া বিভাগ,জামিয়া নু'মানিয়া।
৮ মুহাররম৪৪৫হিজরী(27/07/2023)


উত্তর দেখা হয়েছে : 282