নামায পড়তে পড়তে উযু নষ্ট হয়ে গেলে করনীয়

প্রশ্ন

হযরত আমি যানতে চাই যে, চার রাকাআত নামাযের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়া সম্পূর্ণ হয়েছে এবং দরুদ,মাসুরা বাঁকি আছে, এমত অবস্থায় ওযু নষ্ট হয়ে গেছে এখন আমার করণীয় কী ?

প্রশ্নকারীর নাম: ইনজিল সেখ

প্রশ্নকারীর ঠিকানা: পুখুরিয়া, তিলকপুর, নদীয়া

প্রকাশিত: 29-10-2023

উত্তর

ফতওয়া নং ২১২

 

    

      নামাযের মধ্যে যদি  কারও উযু নষ্টের কোন কারণ সংঘটিত হয়ে যায়, তবে তা হয় ইচ্ছাকৃতভাবে হবে, নতুবা অনিচ্ছাকৃতভাবে। অর্থাৎ, তা সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে বা তার কার্যকারণের মধ্যে মানুষের ইচ্ছা কাজ করে থাকবে অথবা থাকবে না। যদি তা ইচ্ছাকৃতভাবে হয়, তবে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। যেমন কেউ নামাযের মধ্যে খিলখিল করে হেসে উঠে অথবা নিজের শরীরে আঘাত করে রক্ত বের করে ফেলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে পেটের বায়ু বের করে অথবা কেউ ছাদের উপর উঠছে, এমতাবস্থায় তার পায়ের সাথে লেগে কোন পাথরের টুকরা বা অন্য কিছু ছাদ থেকে পড়ে কোন নামাযরত ব্যক্তির মাথায় আঘাত হানে, যার ফলে রক্ত বের হয়ে পড়ে, তবে এ সকল অবস্থায় নামায নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা, উল্লিখিত সকল বিষয় মানুষের ইচ্ছায় প্রকাশ পায়। আর যদি তা অনিচ্ছাকৃতভাবে হয় তবে তা দু'ধরনের হতে পারে। হয় তা এমন কোন বিষয় হতে পারে, যা কমই সংঘটিত হয়, যেমন : উন্মাদ হয়ে যাওয়া, বেহুঁশ হয়ে যাওয়া বা ইমাম মরে যাওয়া ইত্যাদি, অথবা এমন কোন বিষয় যা প্রায়শঃ সংঘটিত হয়, যেমন : পেটের বায়ু, পেশাব, পায়খানা, মযী ইত্যাদি বের হওয়া। অতএব, এমন কোন বিষয় যদি হয় যা কমই সংঘটিত হয়, তবে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি তা এমন কোন বিষয় হয়, যা হারে কম সংঘটিত হয় না। তবে নামায নষ্ট হবে না; বরং এরূপ ব্যক্তি শরীয়তের পক্ষ থেকে এই ইখতিয়ার ও অনুমতি প্রাপ্ত যে, সে তার হাদাছ দূরীভূতকরার পর (তার নামাযের অবশিষ্টাংশ আদায় করে) সেই নামায পূর্ণ করতে পারে। এটাকে 'বেনা' বলা হয়। কিন্তু যদি সে নামায পুনরায় পড়ে নেয় অর্থাৎ, পুনরায় শুরু থেকে পড়ে তবে সেটাই উত্তম। আর যদি 'বেনা' করে তবে সে ক্ষেত্রে নামায নষ্ট না হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছেঃ

১. হাদাছের অবস্থায় কোন রুকন আদায় করবে না।

২. চলমান অবস্থায় কোন রুকন আদায় করবে না। যেমন : ওযূ করতে যাওয়ার সময় বা ওযূ করে আসার সময় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে না, কেননা, কুরআন শরীফ পড়া নামাযের রুকন

৩. নামাযের পরিপন্থী কোন কাজ করবে না এবং এমন কোন কাজও করবে না, যা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব ।

৪. হাদাছ সংঘটিত হওয়ার পর কোন ওযর ব্যতিরেকে এক রুকন আদায় করার সময় পরিমাণ বিলম্ব করবে না; বরং তৎক্ষণাৎ ওযূ করতে যাবে। তবে কোন ওযরবশতঃ বিলম্ব হয়ে গেলে তাতে কোন আপত্তি নেই। যেমন : নামাযের সারি যদি বেশি হয় এবং সে যদি প্রথম সারিতে থেকে থাকে, যার ফলে সারিগুলো ডিঙিয়ে আসা কঠিন হয়।
   মাসআলা : একাকী নামাযরত ব্যক্তির যদি ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে তার তৎক্ষণাৎ ওযূ করে নেওয়া এবং যত দ্রুত সম্ভব ওযূ সমাপ্ত করা উচিত। তবে ওযূ সকল সুন্নত ও মুসতাহাব সহকারে  করা উচিত। এবং এর মাঝে কোন রকম কথাবার্তা বলা না চাই। পানি যদি নিকটে থাকে তবে দূরে যাবে না। সারকথা এই যে, যতটুকু নড়াচড়া একান্ত জরুরী, তার চেয়ে বেশি করবে না, ওযূ করার পর ইচ্ছা করলে সেখানেই (অর্থাৎ, ওযুর জায়গার নিকটবর্তী কোন স্থানে) তার অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করতে পারে এবং এটাই উত্তম। আর ইচ্ছা করলে যেখানে প্রথমে ছিল সেখানে যেয়েও পড়তে পারে। তবে উত্তম হল এই যে, ইচ্ছাকৃত ভাবে সালাম ফিরিয়ে প্রথম নামায শেষ করে ফেলবে এবং তারপর ওযূ করে নতুন করে নামায পড়বে।
(মাজমাউল আনহুর ১/১১৫, বেহেশতী গওহর ৬২পৃষ্ঠা)

 

            স্বাক্ষরঃ

মুফতী সাইফুল ইসলাম কাসিমী
ফতওয়া বিভাগ,জামিয়া নু'মানিয়া।
৫ জুমাদাল উলা ,১৪৪৫ হিজরী (19/11/2023)


উত্তর দেখা হয়েছে : 366