প্রশ্ন
কিছু কিছু আলেম বলেছেন ইমামতি করে, মাদ্রাসায় পড়িয়ে টাকা নেওয়া জায়েজ নয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নকারীর নাম: আব্দুল হামিদ মোল্লা
প্রশ্নকারীর ঠিকানা: কোলাঘাট পূর্বমেডনিপুর
প্রকাশিত: 30-10-2023
উত্তর
ফতওয়া নং ২১৮
ইমামতি করে, মাদরাসায় পড়িয়ে পারিশ্রমিক বা সম্মানি গ্রহণ করা যাবে। এটা মুতাআখিরীন আলেমদের অভিমত। পরিস্থিতির বিবেচনায় এটিই বর্তমান ফতওয়া গ্রাহ্য মত। যারা না জাইয বলছেন, তারা অতিত কালের ফতওয়া বলছেন, যখন ধর্মীয় কর্মরত ব্যক্তিদেরকে বায়তুলমাল বা সরকারি কোষাগার থেকে ভাতা বা সম্মানি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এটা বোঝার জন্য নিন্মোক্ত কতিপয় বিষয় জানা যথেষ্ট।
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গনিমত থেকে প্রাপ্ত খুমুস তথা পঞ্চমাংশ থেকে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন।
ইবনে আবু ‘উমর (রাহঃ) ... মালিক ইবনে আওস ইবনে হাদছান (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, বনু নাযির থেকে হস্তগত সম্পদ হল, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে যে, ‘‘ফায়” প্রদান করেছেন, যার জন্য মুসলিমরা ঘোড়া বা উটে আরোহণ পূর্বক যুদ্ধ করেনি অর্থাৎ বিনা যুদ্ধে যে সম্পদ মুসলিমদের হস্তগত হয়েছিল। এ ছিল বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্য। এ থেকে তিনি তাঁর পরিবারের বছরের খোরাক আলাদা করে নিতেন। আর বাদবাকী তিনি ঘোড়া ও অস্ত্র ইত্যাদি আল্লাহর পথে জিহাদের উপকরণ সংগ্রহের জন্য ব্যয় করতেন। (জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ১৭১৯)
২.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদীন বাইতুল মাল থেকে ভাতা গ্রহণ করতেন। ইসমাঈল ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ)-কে খলীফা বানানো হল, তখন তিনি বললেন, আমার কওম জানে যে, আমার উপার্জন আমার পরিবারের ভরণ-পোষণে অপর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু এখন আমি জনগণের কাজে সার্বক্ষণিক ব্যাপৃত হয়ে গেছি। অতএব আবু বকরের পরিবার এই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে খাদ্য গ্রহণ করবে এবং আবু বকর (রাযিঃ) মুসলিম জনগণের সম্পদের তত্ত্বাবধান করবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৭০)
৩.কুরআনুল কারীম শিক্ষা দানে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিয়োগকৃত ক্বারীদের জন্য খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে বাইতুল মাল থেকে সম্মানজনক ভাতা ধার্য হতো।
ওয়াযীন ইবনে আতা বর্ণনা করেন; মদিনা তাইয়্যিবাতে ৩ জন মুআল্লিম (শিক্ষক) ছিলেন, যারা শিশুদেরকে পাঠদান করতেন। হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের প্রত্যেককেই প্রতিমাসে ১৫ দিরহাম করে ভাতা প্রদান করতেন। (আল মুহাল্লা খন্ড ৯/১৫ পৃষ্ঠা,মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ৪/৩৪১)
উপরোক্ত ঘটনাগুলির আলোকে প্রমাণ হয় যে, ইমাম ও কুরআনের শিক্ষকদের ভাতা বা সম্মানী শরীয়ত সম্মত।
উল্লেখ্য, যেসব হাদীসে কুরআনের শিক্ষকরা ছাত্রের কাছ থেকে হাদীয়া গ্রহণ করায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে সেগুলো ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।
একটি ব্যাখ্যা হল; বাইতুল মাল থেকে শিক্ষকদের জন্য ভাতা ধার্য করার পরেও তারা যদি ছাত্রদের কাছ থেকে হাদিয়ার নামে কিছু নিয়ে থাকে তাহলে সেটি একই কাজের দুইবার পারিশ্রমিক নেওয়ার মতো হয়ে যায়। বিধায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ; কোন স্কুলের শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে যদি বখশিস গ্রহণ করে, প্রধান শিক্ষক এটা শুনলে এটার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলবেন, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আপনাকে বেতন দেওয়ার পরেও ছাত্রদের কাছ থেকে কেন ঘুষ নিচ্ছেন ?
স্বাক্ষরঃ
মুফতী সাইফুল ইসলাম কাসিমী
ফতওয়া বিভাগ,জামিয়া নু'মানিয়া।
১৬ জুমাদাল উলা ,১৪৪৫ হিজরী (30/11/2023)
উত্তর দেখা হয়েছে : 801