হাদীসের আলোকে যমযম কূপের ইতিহাস

প্রশ্ন

  জম জম কূপের ইতিহাস সম্পর্কে সহীহ হাদীস

প্রশ্নকারীর নাম: নুরুল আমিন মোল্লা

প্রশ্নকারীর ঠিকানা: রামতানু নগর,কাকদ্বিপ, দক্ষিন 24 পরগনা। 9382359757

প্রকাশিত: 12-06-2024

উত্তর

ফতওয়া নং ৪২০

 ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
   তিনি বলেন, যখন ইবরাহীম (‘আঃ) ও তাঁর স্ত্রী ( সারার ) মাঝে যা হবার হয়ে গেল, তখন ইবরাহীম (‘আঃ) (শিশুপুত্র) ইসমাঈল এবং তার মাকে নিয়ে বের হলেন। তাদের সঙ্গে একটি থলে ছিল, যাতে পানি ছিল। ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মা মশক হতে পানি পান করতেন। ফলে শিশুর জন্য তাঁর স্তনে দুধ বাড়তে থাকে। অবশেষে ইবরাহীম (‘আঃ) মক্কায় পৌঁছে হাযেরাকে একটা বিরাট গাছের নীচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। অতঃপর ইবরাহীম (‘আঃ) আপন পরিবারের ( সারার ) নিকট ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মা কিছু দূর পর্যন্ত তাঁর অনুসরণ করলেন। অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন তিনি পিছন হতে ডেকে বললেন, হে ইবরাহীম! আপনি আমাদেরকে কার নিকট রেখে যাচ্ছেন? ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, আল্লাহর কাছে। হাযেরা (‘আঃ) বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। রাবী বলেন, অতঃপর হাযেরা (‘আঃ) ফিরে আসলেন, তিনি মশক হতে পানি পান করতেন আর শিশুর জন্য দুধ বাড়ত। অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল। তখন ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মা বললেন, আমি যদি গিয়ে এদিক সেদিকে তাকাতাম! তাহলে হয়ত কোন মানুষ দেখতে পেতাম। রাবী বলেন, অতঃপর ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মা গেলেন এবং সাফা পাহাড়ে উঠলেন আর এদিকে ওদিকে তাকালেন এবং কাউকে দেখেন কিনা এজন্য বিশেষভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকেও দেখতে পেলেন না। তখন দ্রুত বেগে মারওয়া পাহাড়ে এসে গেলেন এবং এভাবে তিনি কয়েক চক্কর দিলেন। পুনরায় তিনি বললেন, যদি গিয়ে দেখতাম যে, শিশুটি কি করছে। অতঃপত তিনি গেলেন এবং দেখতে পেলেন যে, সে তার অবস্থায়ই আছে। সে যেন মরণাপন্ন হয়ে গেছে। এতে তাঁর মন স্বস্তি পাচ্ছিল না। তখন তিনি বললেন, যদি সেখানে যেতাম এবং এদিক সেদিকে তাকিয়ে দেখতাম। সম্ভবতঃ কাউকে দেখতে পেতাম। অতঃপর তিনি গেলেন, সাফা পাহাড়ের উপর উঠলেন এবং এদিকে সেদিক দেখলেন এবং গভীরভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। এমনকি তিনি সাতটি চক্কর পূর্ণ করলেন। তখন তিনি বললেন, যদি যেতাম তখন দেখতাম যে সে কী করছে। হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনতে পেলেন। অতঃপর তিনি মনে মনে বললেন, যদি আপনার কোন সাহায্য করার থাকে তবে আমাকে সাহায্য করুন। হঠাৎ তিনি জিবরাঈল (‘আঃ)-কে দেখতে পেলেন। রাবী বলেন, তখন তিনি (জিবরাঈল) তাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা এরূপ করলেন অর্থাৎ গোড়ালি দ্বারা জমিনের উপর আঘাত করলেন। রাবী বলেন, তখনই পানি বেরিয়ে আসল। এ দেখে ইসমাঈল (‘আঃ)-এর মা অস্থির হয়ে গেলেন এবং গর্ত খুঁড়তে লাগলেন। রাবী বলেন, এ প্রসঙ্গে আবুল কাসিম [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বলেছেন, হাযেরা (‘আঃ) যদি একে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দিতেন তাহলে পানি বিস্তৃত হয়ে যেত। রাবী বলেন, তখন হাযেরা (‘আঃ) পানি পান করতে লাগলেন এবং তাঁর সন্তানের জন্য তাঁর দুধ বাড়তে থাকে। রাবী বলেন, অতঃপর জুরহুম গোত্রের একদল উপত্যকার নীচু ভূমি দিয়ে অতিক্রম করছিল। হঠাৎ তারা দেখল কিছু পাখি উড়ছে। তারা যেন তা বিশ্বাসই করতে পারছিল না আর তারা বলতে লাগল এসব পাখি তো পানি ব্যতীত কোথাও থাকতে পারে না। তখন তারা সেখানে তাদের একজন দূত পাঠাল। সে সেখানে গিয়ে দেখল, সেখানে পানি মাওজুদ আছে। তখন সে তার দলের লোকদের নিকট ফিরে আসল এবং তাদেরকে সংবাদ দিল। অতঃপর তারা হাযেরা (‘আঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে ইসমাঈলের মা। আপনি কি আমাদেরকে আপনার নিকট থাকা অথবা (রাবী বলেছেন), আপনার নিকট বসবাস করার অনুমতি দিবেন? [হাযেরা (‘আঃ) তাদেরকে বসবাসের অনুমতি দিলেন এবং এভাবে অনেক দিন কেটে গেল]। অতঃপর তাঁর ছেলে বয়ঃপ্রাপ্ত হল। তখন তিনি (ইসমাঈল) জুরহুম গোত্রেরই একটি মেয়েকে বিয়ে করলেন। রাবী বলেন, পুনরায় ইবরাহীম (‘আঃ)-এর মনে জাগল তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে (সারাহ) বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা সম্পর্কে খবর নিতে চাই। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল (‘আঃ)-এর স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, সে যখন আসবে তখন তুমি তাকে আমার এ নির্দেশের কথা বলবে, “তুমি তোমার ঘরের চৌকাঠখানা বদলিয়ে ফেলবে।” ইসমাঈল (‘আঃ) যখন আসলেন, তখন স্ত্রী তাঁকে খবরটি জানালেন, তখন তিনি স্ত্রীকে বললেন, তুমি সেই চৌকাঠ। অতএব তুমি তোমার পিতামাতার নিকট চলে যাও। রাবী বলেন, অতঃপর ইবরাহীম (‘আঃ)-এর আবার মনে পড়ল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী (সারাহ)-কে বললেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিবারের খবর নিতে চাই। অতঃপর তিনি সেখানে আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল (‘আঃ)-এর স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। পুত্রবধু তাঁকে বললেন, আপনি কি আমাদের এখানে অবস্থান করবেন না? কিছু পানাহার করবেন না? তখন ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, তোমাদের খাদ্য ও পানীয় কি? স্ত্রী বলল, আমাদের খাদ্য হল গোশ্‌ত আর পানীয় হল পানি। তখন ইবরাহীম (‘আঃ) দু’আ করলেন, “হে আল্লাহ! তাদের খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের মধ্যে বরকত দিন”। রাবী বলেন, আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইবরাহীম (‘আঃ)-এর দু’আর কারণেই বরকত হয়েছে। রাবী বলেন, আবার কিছুদিন পর ইবরাহীম (‘আঃ)-এর মনে তাঁর নির্বাসিত পরিজনের কথা জাগল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী (সারাহ)-কে বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের খবর নিতে চাই। অতঃপর তিনি এলেন এবং ইসমাঈলের দেখা পেলেন, তিনি যমযম কূপের পিছনে বসে তাঁর একটি তীর মেরামত করছেন। তখন ইবরাহীম (‘আঃ) ডেকে বললেন, হে ইসমাঈল! তোমার রব তাঁর জন্য একখানা ঘর নির্মাণ করতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল (‘আঃ) বললেন, আপনার রবের নির্দেশ পালন করুন। ইবরাহীম (‘আঃ) বললেন, তিনি আমাকে এও নির্দেশ দিয়েছেন যে, তুমি যেন আমাকে এ বিষয়ে সহায়তা কর। ইসমাঈল (‘আঃ) বললেন, তাহলে আমি তা করব অথবা তিনি অনুরূপ কিছু বলেছিলেন। অতঃপর উভয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ইবরাহীম (‘আঃ) ইমারত বানাতে লাগলেন আর ইসমাঈল (‘আঃ) তাঁকে পাথর এনে দিতে লাগলেন আর তাঁরা উভয়ে এ দু’আ করছিলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজ কবুল করুন। আপনি তো সব কিছু শুনেন এবং জানেন। রাবী বলেন, এরই মধ্যে প্রাচীর উঁচু হয়ে গেল আর বৃদ্ধ ইবরাহীম (‘আঃ) এতটা উঠতে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন তিনি (মাকামে ইবরাহীমের) পাথরের উপর দাঁড়ালেন। ইসমাঈল তাঁকে পাথর এগিয়ে দিতে লাগলেন আর উভয়ে এ দু’আ পড়তে লাগলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজটুকু কবূল করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন– ( আল-বাকারাহঃ ১২৭)।  ( সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩৬৫)

 

 

                        স্বাক্ষর

মুফতী সাইফুল ইসলাম কাসিমী
ফতওয়া বিভাগ,জামিয়া নু'মানিয়া।
 ২১ যিলহজ্জ, ১৪৪৫ হিজরী (28/06/2024)


উত্তর দেখা হয়েছে : 168